সিলেটসোমবার , ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  1. Breaking News
  2. অন্যান্ন
  3. অপরাধ
  4. অর্থনীতি
  5. আইন-আদালত
  6. আজ-কাল
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আমাদের পরিবার
  9. আরও
  10. আলোচিত সংবাদ
  11. ইসলাম
  12. কলাম
  13. কৃতিত্ব
  14. খেলা-ধোলা
  15. জাতীয়
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইসলামে দাওয়াত ও তাবলিগ

Ruhul Amin
ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫ ৭:৫৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ইসলাম প্রচারধর্মী দ্বীন। দাওয়াত ও তাবলিগ ইসলামের রক্ষাকবচ। যুগে-যুগে, কালে-কালে তাবলিগের দায়িত্ব পালন করেন পূর্ববর্তী সব নবী-রাসুল। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবীও এ দায়িত্ব পালন করেন গোটা ২৩ বছর। বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেন, ‘হে জনগণ! তোমরা যারা উপস্থিত আছো, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে অনুপস্থিতদের কাছে আমার বাণীগুলো পৌঁছে দেওয়া।’

নবুয়তি ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ মিশন নবীজি (সা.)-এর হাতে পূর্ণতা লাভ করে। তাঁর শিক্ষা ও আদর্শের অনুসারীরা বিশেষত খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সুফি-দরবেশ ও মুবাল্লিগরা ধর্ম প্রচারের যে নজির স্থাপন করে তা অসাধারণ। তাদের অব্যাহত মেহেনতের ফলে মরক্কো থেকে চীনের প্রাচীর পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদ ইসলামের আলোকে উদ্ভাসিত হয়। সাম্য, ন্যায়পরায়ণতা ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে আদর্শ সমাজ গড়ে ওঠে। নতুন সংস্কৃতি-সভ্যতার উন্মেষ ঘটে এবং একটি নতুন বিশ্ব অস্তিত্ব লাভ করে। মুবাল্লিগদের মানবীয় মূল্যবোধ, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সহমর্মিতাসুলভ গুণাবলি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে একে অপরের কাছে নিয়ে আসে।

ভারতবর্ষে তাবলিগ

আগে থেকেই ভারতবর্ষে আরব বণিক ও পীর-দরবেশদের আনাগোনা থাকলেও মুহাম্মদ ইবন কাসিম কর্তৃক সিন্ধু বিজয়ের ফলে আলিম, ধর্মপ্রচারক, পীর, আউলিয়া ও দরবেশদের ভারতবর্ষে আগমন বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, খানাকাহ ও মাদরাসা গড়ে ওঠে। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে তাঁরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে লাহোরের দাতা গঞ্জবখশ, পাঞ্জাবের সায়্যিদ জালালুদ্দিন সুরখপোশ বুখারি, রাজস্থানের শায়খ হামিদুদ্দিন নাগুরি, মুলতানের শায়খ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, পশ্চিম পাঞ্জাবের শায়খ ফরিদুদ্দিন গঞ্জশকর, দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া, আজমিরের খাজা মুইনুদ্দিন চিশতী, দাক্ষিণাত্যের শায়খ কামালুদ্দিন চিশতী, পানিপথের বু ‘আলি শাহ কলন্দর, গুজরাটের শায়খ আবদুল ওয়াহাব শাজলি, কাশ্মীরের সায়্যিদ আলি হামাদানি, বিহারের শায়খ শারফুদ্দিন ইয়াহিয়া মানিরি, চট্টগ্রামের হজরত শাহ আমানত, সোনারগাঁয়ের শায়খ শারফুদ্দীন আবু তোয়ামা, বগুড়ার সাইয়্যেদ মাহমুদ মাহি সওয়ার, রংপুরের মাওলানা কারামাত আলী জৌনপুরীর নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

এসব পীর মাশায়েখদের অব্যাহত দাওয়াতি তৎপরতার ফলে ইসলামের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, উদারতা ও পরমত সহিষ্ণুতার বাণী বর্ণপ্রথা ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। দলে দলে নির্যাতিত হিন্দুরা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বহু রাজা মহারাজা বিশেষত পাঞ্জাবের বেশ কয়েকটি রাজপুত পরিবার, মালবের রাজগড় রাজ্যের রাজা শ্রী মুতী সিংহ, পানিপথের অমর সিংহ রাজপুত এসব সুফিদের দাওয়াতি তৎপরতার ফলে ইসলাম কবুল করে ধন্য হন। কালক্রমে সিন্ধু এ উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান মুসলিম এলাকায় পরিণত হয়। মুহাম্মদ ইবন কাসিমের পর ১০০ হিজরি সালে উমর ইবন আবদুল আজিজ (রহ.) সিন্ধু অঞ্চলের সব রাজা ও ঠাকুরদের কাছে ইসলাম কবুল করার জন্য তাবলিগি পত্র পাঠান। পত্র প্রাপ্তির পর রাজা দাহিরের দুই ছেলে জয় সিংহ ও চাচসহ অধিকাংশ রাজা ও ঠাকুর ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন।

উমর ইবন আবদুল আজিজ (রহ.) জয় সিংহকে ব্রা‏হ্মণাবাদের প্রশাসক নিযুক্ত করেন। আব্বাসীয় খলিফা মাহদি ক্ষমতায় আরোহণের পর সিন্ধুর গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ আঞ্চলিক প্রশাসকদের কাছে ইসলাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে দাওয়াতি পত্র পাঠান। শ্রী রায় ও মহারাজা নামে পরিচিত দুজন শাসকসহ বহু মানুষ ইসলামে দীক্ষা লাভ করেন। সিন্ধু অঞ্চলে রাজা, ঠাকুর ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে আরব বংশোদ্ভূত তাবেয়ি মুহাম্মদ আলাফি ও তাঁর সহকর্মী বিশেষত হামিম ইবন সামা শামির বিশেষ অবদান রয়েছে। রাজা দাহিরের ছেলে জয় সিংহকে ইসলামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে এসব ধর্মপ্রচারকরা (মুবাল্লিগিন) ব্যাপক প্রয়াস চালান (আবু জফর নাদভি, তারিখে সিন্দ, পৃ. ৮৭, ১২৫, ১২৬, ১৬১; হামিদ আল কুফি, চাচনামা, পৃ. ৮৬; মুফতি মুহাম্মদ মুশতাক তিজারভি, বার্রে সাগির মে ইশা’আতে ইসলাম কী তারিখ,পৃ. ২৯-৬০)।

পরে দাওয়াত ও তাবলিগের ধারাবাহিকতায় যুক্ত হন শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভির (রহ.)-এর বংশধর মাওলানা ইলিয়াছ (রহ.)। ১৯১০ সালে তিনি যখন ভারতে তাবলিগি কার্যক্রম শুরু করেন তখন ঔপনিবেশিক রাজনৈতিক পারিপার্শ্বিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ ক্রমশ ধর্মবিমুখ হয়ে যাচ্ছিল। বিদেশি রাজশক্তির তোষণ ও ইংরেজি সংস্কৃতির লালনকে গৌরব মনে করা হতো। মেওয়াট থেকে তার এ মিশনের অভিযাত্রা। দুর্ধর্ষ তস্করদের জন্য মেওয়াট-এর কুখ্যাতি ছিল ভারতজুড়ে। লুণ্ঠন ও উৎপীড়নের মাধ্যমে গোটা এলাকায় তারা কায়েম করে ত্রাসের রাজত্ব। তাবলিগি কার্যক্রমের ফলে মেওয়াটের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এখন সৎ ও আল্লাহওয়ালা। পুরো অঞ্চলে বিরাজ করছে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি। মাওলানা ইলিয়াছ (রহ.) উপলব্ধি করেন, ব্যক্তি চরিত্র সংশোধন করা না গেলে সামষ্টিক জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে। ব্যক্তিসত্তায় ইখলাস, তাকওয়া ও পরকালীন জবাবদিহি সঞ্চার করা গেলে তা জীবনের সবক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ব্যক্তি জীবনে যদি কেউ আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠে তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের যে কোনো গুরুদায়িত্ব তাঁর ওপর নির্দ্বিধায় ন্যস্ত করা যায়।

উপমহাদেশের বুজুর্গ ওলামা ও পীর-মাশায়েখদের সহযোগিতায় ক্রমান্বয়ে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাসহ প্রসারিত হয়েছে গোটা দুনিয়ায়। ১৯৪৪ সালে মাওলানা আবদুল আজিজ (রহ.)-এর প্রচেষ্টায় তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে চালু হয় ‘বিশ্ব ইজতেমা’। ১৬০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ ইজতিমা মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিলনমেলা। বাংলাদেশসহ গোটা দুনিয়ার দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এতে ধর্মীয় উদ্দীপনা ও হৃদয়ের পবিত্র আবেগ নিয়ে যোগ দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ৩০ লাখ মুসলমান এ ইজতেমায় যোগ দেন এবং ইজতেমা শেষে নিঃস্বার্থ মুবাল্লিগদের ছোট ছোট গ্রুপ এক বছর, ছয় মাস, তিন মাস ও ৪০ দিনের দাওয়াতি কার্যক্রম নিয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে।

লেখক : ধর্ম উপদেষ্টা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার