ডেস্ক রিপোর্ট:
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ৫৩ দিন পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল থামছে না।
ক্ষুধার্ত, নিঃস্ব, আতঙ্কিত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সোমবারও পালংখালী হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মোহাম্মদ শোয়েব নামের ২৯ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা যুবক রয়টার্সকে বলেছেন, রাখাইনের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে।
“সেনাবাহিনী লুটপাট চালাচ্ছিল বলে আমরা গত মাসে রওনা হতে পারিনি। কিন্তু তারা গ্রামে এসে গুলি শুরু করায় পর আমরা পালিয়ে অন্য গ্রামে চলে যাই।”
বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে নিজেদের গ্রামের এলাকায় গিয়েছিলেন শোয়েব। সেখানে গিয়ে দেখেছেন, পুরো গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
সোমবার আসা রোহিঙ্গারা রয়টার্সকে বলেছে, টানা কয়েক দিন পাহাড়, জঙ্গল আর বর্ষার পানি ঠেলে তাদের বাংলাদেশে পৌঁছাতে হয়েছে।
নাফ নদীতে কোমর পানি ঠেল যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই আহত, অসুস্থ। নারীদের কারও কারও মাথায় পুটলিতে বাঁধা সামান্য চাল, থালা-বাটি বা কাপড়। পুরুষদের কেউ কেউ কাঁধে বাঁশের বাঁকে বইছেন শেষ সম্বলটুকু।
গত ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে নৌকা ডুবে প্রতি সপ্তাহেই তাদের মৃত্যুর খবর আসছে।সোমবার ভোরেও টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের ডাঙ্গাপাড়া পয়েন্টে নৌকাডুবির ঘটনায় ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছে আরও ৩১ জন।
নিহতদের মধ্যে পাঁচজন নারী, ছয়জন শিশু ও একজন পুরুষ। নৌকার যাত্রীদের মধ্যে ২২ জনকে স্থানীয়রা জীবিত উদ্ধার করেছে বলে কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশনের কনটিনজেন্ট কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জাফর ইনাম সজীব জানিয়েছেন।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, পশ্চিম রাখাইনের বাসিন্দারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে খাবারের অভাবে, কারণ অধিকাংশ বাজার বন্ধ; ত্রাণকর্মীদেরও সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
আগের মতই সেনাবাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় বৌদ্ধরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামে হামলা করছে বলে উঠে এসেছে তাদের কথায়।
এদিকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা যত বাড়ছে, তাদের খাবার, চিকিৎসা আর পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা তত কঠিন হয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ত্রাণকর্মীদের জন্য।রেডক্রস সোমবার কক্সবাজারে ৬০ শয্যা ও তিন ওয়ার্ডের বড় একটি ফিল্ড হাসপাতাল চালু করেছে, যেখানে অপারেশন থিয়েটার ও প্রসূতিতের জন্য আলাদা ব্যবস্থাও রয়েছে।
মিয়ানমার সরকার রাখাইনে তাদের সেনাবাহিনীর অভিযানকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ বললেও জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সোমবার জানিয়েছে, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বেআইনি বল প্রয়োগের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের ইউরোপ সফরের আমন্ত্রণ তারা স্থগিত করছে।
মিয়ানমারকে ওইসব অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে ইইউ পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের এক বৈঠক থেকে।
পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্তের ঘোষণা দিলেও পুরো ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে তাদের অবস্থানের তেমন কোনো নড়চড় হয়নি।জেনারেল মিন অং হ্লাইং গত সপ্তাহে মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বলেন, রোহিঙ্গাদের (তার ভাষায় অবৈধ বাঙালি) পালিয়ে যাওয়ার যে সংখ্য বলা হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত।
রয়টার্স লিখেছে, মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের সফরের আমন্ত্রণ স্থগিতের যে সিদ্ধান্ত ইইউ নিয়েছে, তা অনেকটাই প্রতীকী। তবে ইউরোপীয় দেশগুলোর এই জোট আরও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে।